পুষ্পবন্ত প্যালেসে হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত

পুষ্পবন্ত প্যালেসে হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত!

টাটা গোষ্ঠীর মাধ্যমে পুষ্পবন্ত প্যালেসকে হোটেলের রূপান্তরিত করার লিজ চুক্তি সম্পন্ন!

ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হল আজ। ঐতিহ্যবাহী পুষ্পবন্ত প্যালেসকে ফাইভ স্টার হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করতে আজ সরকারি পর্যটন দপ্তর এবং ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড (আইএইচসিএল) -এর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক লিজ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের রূপায়ণের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এক নতুন পর্যটন গন্তব্য হিসেবে দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করবে বলে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা।

আজ রাজধানী আগরতলার টিআইএফটি (Tripura Institute of Technology and Future Tourism) কনফারেন্স হলে এই লিজ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা, পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, সচিব পি কে চক্রবর্তী সহ একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ তাদের জন্য এক গৌরবের দিন। ত্রিপুরার মানুষের বহু প্রতীক্ষিত একটি স্বপ্ন আজ বাস্তব রূপ পেয়েছে।

দেশের অন্যান্য রাজ্যে তাজ হোটেলের মতো ব্র্যান্ডেড হোটেল থাকলেও এই রাজ্যে এধরনের হেরিটেজ হোটেল গড়ে তোলার প্রয়াস পূর্বে দেখায়নি কেউ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আইএইচসিএলের সঙ্গে এর আগে একটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল এবং আজ তা আনুষ্ঠানিকভাবে লিজ চুক্তিতে পরিণত হলো। ইচ্ছে করলে আজ থেকেই কাজ শুরু করা যায়। যদিও সরকারের লক্ষ্য দুই বছরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করা তবে আইএইচসিএল কর্তৃপক্ষের মতে তিন বছর সময় লাগতে পারে এই কাজটি সম্পন্ন করতে।

১৯১৭ সালে আগরতলার রাজপরিবারের শাসনকালে নির্মিত হয় পুষ্পবন্ত প্যালেস। মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্য বাহাদুর এই পুষ্পবন্ত রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এটি গভর্ণর হাউজ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, পরবর্তীতে নতুন গভর্ণর হাউজ নির্মাণ হলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল বহুদিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রাসাদটির ঐতিহাসিক, স্থাপত্যিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেয়েছে বর্তমান সরকার। তিনি আরও জানান, হেরিটেজ হোটেলটিতে প্রায় ১০০টি ঘর থাকবে, যার মধ্যে থাকবে ৪টি এক্সক্লুসিভ সুইট। রাজ ঘরানার আদলে ঘরগুলি সাজানো হবে, যাতে অতিথিরা রাজকীয় আতিথেয়তার স্বাদ নিতে পারেন। এটি কোনো সাধারণ কমার্শিয়াল হোটেল নয়, বরং এটি হবে এক ‘রাজসিক অভিজ্ঞতার কেন্দ্র’।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু একটি হোটেল নয়, রাজ্যের পর্যটন খাতের উন্নয়নের এক বিশাল দরজা খুলে গেল বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “টাটা গোষ্ঠীর চেইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরের পর্যটকদের আগমন ঘটবে। তারা শুধু এই হোটেলেই থাকবেন না, রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র যেমন উনাকোটি, নীরমহল, যতেশ্বর মন্দির, সিপাহীজলা ইত্যাদি স্থানের সম্ভাবনাগুলি ঘুরে দেখবেন।” এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি প্রায় ২০০ জন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরোক্ষভাবে আরও বহু মানুষের জীবিকায় এই হোটেল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইএইচসিএল-কে এই হোটেল নির্মাণের জন্য ৭.৭৮ একর জমি লিজে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এই কাজ সহজ ছিল না। নানা রকম প্রশাসনিক জটিলতা এবং দাপ্তরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করেছি।”

ত্রিপুরার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পর্যটনের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে চলেছে এক অনন্য নিদর্শন — তাজ পুষ্পবন্ত প্যালেস হেরিটেজ হোটেল। এর মাধ্যমে রাজ্য যেমন পর্যটনের নতুন দিশা পাবে, তেমনি কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও একটি নতুন অধ্যায় রচিত হবে। এই প্রকল্প কেবল একটি হোটেল নির্মাণ নয়, বরং একসময়কার রাজমহলের গৌরবকে আধুনিক পরিসরে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।About Us