ধলাই জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহালদশায় ক্ষোভ পাহাড়ী এলাকায়!
রাজ্যে একের পর এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে গজিয়ে উঠলেও পাহাড়ি এবং প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর হাল বেহাল। চিকিৎসা পরিষেবা বলতে যেন শুধুই নামকাওয়াস্তে কিছু ব্যবস্থা। এদিকে রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতিকেও উন্নয়নের জোয়ার বলে প্রচার করছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে এক নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ধলাই জেলায় স্বাস্থ্য পরিষেবাঃ
ত্রিপুরার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ জেলা হিসেবে চিহ্নিত ধলাই জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর চিত্র অত্যন্ত শোচনীয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও এই জেলার একাধিক ব্লক এবং মহকুমায় স্বাস্থ্য পরিষেবার ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ধলাই জেলার গন্ডাছড়া মহকুমার পরিস্থিতি সবচেয়ে সংকটজনক। সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী এখানে একটি মহকুমা হাসপাতাল থাকলেও, নেই একজনও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কোন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। ফলে এই অঞ্চলের মানুষকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য বহু দূর পাড়ি দিয়ে অন্যত্র যেতে হয়।
দিনে তিন ঘন্টা স্বাস্থ্য পরিষেবা!
গন্ডাছড়া মহকুমার দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক। এলাকাটি ম্যালেরিয়া ও জলবাহিত রোগপ্রবণ হওয়ার পরও এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দৈনিক মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য খোলা থাকে। ফলে জরুরি চিকিৎসার অভাবে বহু রোগীকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া রইস্যাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জগবন্ধু পাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যত নামকাওয়াস্তে চলছে। চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় ওষুধের তীব্র সংকট রয়েছে সেখানে।
নেপালটিলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেঃ
উনকোটি ও ধলাই জেলার সীমানায় অবস্থিত নেপালটিলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটি জেলার মানুষের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটিও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জীবনদায়ী ওষুধের অভাবে ধুঁকছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও উচ্চপদস্থ কর্তা বহুদিন ধরেই এই হাসপাতালের পরিদর্শনে আসেননি। ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিরাশি মাইল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেঃ
আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত বিরাশি মাইল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশাল নতুন ভবন তৈরি হলেও চিকিৎসা পরিষেবা সেই মান্দাতা আমলের মতোই চলছে। আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির পরও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি এবং ওষুধের ঘাটতির কারণে হাসপাতালটি কার্যত অকেজো হয়ে রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলের স্বাস্থ্য কাঠামো!
ধলাই জেলার আঠারোমুড়া, লংতরাই এবং শাখান পাহাড়ের কিছু অংশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আরও সংকটপূর্ণ। কালাঝারি পাহাড়ের পরিস্থিতিও একইরকম। বাম আমল থেকে বর্তমান সরকারের আমলেও পাহাড়ি এলাকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করার কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিঃ
এই পরিস্থিতিতে পিপলস মুভমেন্ট ফর ট্রাইবাল রাইটস নামে একটি সংগঠন রাজ্য সরকারের কাছে পাহাড়ি এলাকায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করার দাবিতে সরব হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি অবিলম্বে পাহাড়ি এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না করা হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে তারা।
সরকারের নীরবতাঃ
স্বাস্থ্য পরিষেবার এই চরম বেহাল দশার পরও রাজ্য সরকার কেন নীরব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ধলাই ও আশেপাশের পাহাড়ি এলাকার মানুষের দাবি, সরকার শুধু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর উন্নয়নে মনোযোগ না দিয়ে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। সরকার কি এই দাবিগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেবে, নাকি প্রান্তিক মানুষের কষ্ট উপেক্ষা করেই উন্নয়নের ঢোল বাজিয়ে যাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।