আগরতলা থেকে ধর্মনগর পর্যন্ত চারটি রেল স্টেশনে এখনো টিকিট কাউন্টার খোলা হয়নি। রেল মন্ত্রকের এই গাফিলতির কারনে সংশ্লিষ্ট স্টেশন গুলোর উপর নির্ভরশীল যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মুংগিয়াকামি , জওহর নগর, এস কে পাড়া ও নালকাটা – এই স্টেশনগুলোতে টিকিট কাউন্টার খোলার দাবী দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে স্থানীয় মানুষজন। জনপ্রতিনিধিরাও অনেকে বিষয়টা সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু কেউ কোন উদ্যোগ নিচ্ছেননা। ফলে ভবিষ্যতে কোন দিন এসমস্ত স্টেশন গুলোতে টিকিট কাউন্টার খোলা হবে কিনা অনিশ্চিত। প্রথমত , টিকিট কাউন্টার না থাকায় সংশ্লিষ্ট স্টেশনের যাত্রীরা ইচ্ছা না থাকলেও টিকিট ছাড়াই রেল চলতে হয়। তখন রেলের টি টি র সাথে প্রায়ই বাক বিতন্ডা হয় সংশ্লিষ্ট যাত্রী সাধারণের। প্রায় এই স্টেশনের যাত্রীদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু রেল কতৃপক্ষের কোন সাড়া শব্দ নেই। ধর্মনগর, আগরতলা রেল চালু হওয়ার সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এই চারটি স্টেশনেই স্টেশন বিল্ডিং নির্মান করা হয়। কিন্তু স্টেশন চালু না হওয়ায় নালাকাটা এবং এস কে পাড়ার মত স্টেশন পরিত্যাক্ত বাড়িতে পরিনত হয়েছে।সন্ধ্যার অন্ধকার নামলেই নীশিকুটুম্বদের দখলে চলে যায় স্টেশন গুলো। অথচ বিশাল সংখ্যাক যাত্রীরা এসব স্টেশন গুলোর উপর নির্ভরশীল। রেল কতৃপক্ষের ভুমিকায় তারা অসন্তুষ্ট।
Category: cজাতীয় খবর
অশান্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত যাওয়া বাড়ছে। দলে দলে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশিরা। এদিকে খরা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে শ্যামলী পরিবহন। বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহনের বাস আক্রান্ত হওয়ার পর গত দুদিন এখান থেকে কোন যাত্রী যেতে সাহস করেননি। অবশেষে আতঙ্ক কাটিয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসে বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে আসছেন অনেকেই। এমনটাই জানিয়েছেন শ্যামলী এনার ট্রাভেলসের ম্যানেজার বিধান চক্রবর্তী। তিনি বলেন একসময় মঙ্গল, বৃহস্পতি শনি অর্থাৎ সপ্তাহে তিন দিন শ্যামলী পরিবহনের বাস চলাচল করতো। এখন শুধুমাত্র মঙ্গল এবং শনিবার। আগরতলা থেকে যাচ্ছে শ্যামলী পরিবহনের বাস। আগামী শনিবার এই বাসে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ১৬ জন যাত্রী টিকিট কেটেছেন। পুরোপুরিভাবে টিকেট বিক্রি না হলেও মোটামুটি ভাবে মানুষ যাবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ৩১ আসনের বাসের বেশ কিছু আসন ফাঁকা থাকছে প্রতিদিন৷ বাংলাদেশ থেকে ও এপারে আসছেন অনেকেই। যদিও এখন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে সহকারি হাইকমিশন অফিস থেকে ভিসা প্রদান বন্ধ। তারপরেও যারা আটকে আছেন তাদের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার এটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ম্যানেজার বিধান চক্রবর্তী জানিয়েছেন এখান থেকে নরসিংদী, ভৈরব সহ বেশ কিছু জায়গায় যাচ্ছেন যাত্রী।
বাংলাদেশিরা মূলত দু’টি উদ্দেশ্যে আগরতলায় আসেন— চিকিৎসার প্রয়োজন ও ব্যবসার কাজে। সাম্প্রতিক অশান্তির জেরে দুই জায়গাতেই হয়েছে সমস্যা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিদ্বেষের ঘটনা বেড়ে চলার প্রেক্ষিতে আগরতলার হোটেলে বাংলাদেশীদের বুকিং বন্ধ আবার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পরিসেবা বন্ধ করার ঘোষনা না দেওয়া হলেও একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিন্তু পরিসেবা বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। এতেও বিপাকে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশী৷ তবে অটল বিহারি বাজপেয়ী আঞ্চলিক ক্যান্সার হাসপাতালে কিন্তু অনেক বাংলাদেশী চিকিৎসা পরিসেবা নিতে আসছেন এখনো৷ শহরের কোন চিকিৎসক এখনো বাংলাদেশীদের চিকিৎসা করবেন না বলে কোন ঘোষণা দেন নি৷ কোন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আপাতত বাংলাদেশি রোগী দেখা মুলতুবি রাখার কথা ঘোষণা করেছেন বলে জানা নেই। ফলে থাকার হোটল সমস্যা থাকার কারনে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা করাতে আসা অনেক বাংলাদেশি। এটাও ঠিক বাংলাদেশে অশান্তির জেরে এখন দু’দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত অনেকটাই কম। হিন্দু ধর্মগুরু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পরে ফের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে দৈনিক কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। এখন তা কমে গিয়েছে অনেকাটাই। ভারত সরকার এখন বাংলাদেশিদের মেডিক্যাল ভিসা ছাড়া আর কোনও ভিসা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিস। সব মিলিয়ে সমস্যা বাড়ছে।
অগ্নিগর্ভ পদ্মাপার। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার অফিস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বুধবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভিসা অফিস। মঙ্গলবারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ প্রশাসন। আগরতলা সহকারী হাইকমিশনার অফিসের বাইরে একটি বিবৃতি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা আছে, নিরাপত্তাজনিত কারনে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিস থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ভিসা প্রদান। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মানুষ। সহকারী হাইকমিশন অফিসের সামনে ভীড় করেন তারা৷ সোমবার আচমকা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা হয়৷ সে দেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ভিসা অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
সোমবারের ঘটনার নিন্দা করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও। তিনি জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের আচরণ কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। নিন্দা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক। তারা রাজ্যকে কড়া নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ দিয়েছে৷ বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও দেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসকে নিশানা করা কাম্য নয়, তা যে পরিস্থিতিই হোক না কেন। ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধিও করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে সোমবার রাতেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে তিন জন সাব ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ক্লোজ় করা হয়েছে এক ডেপুটি পুলিশ সুপারকেও। সোমবার বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতারও করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। সোমবারের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে বাকি অভিযুক্তদেরও শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর। এদিকে সোমবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে ভিসা সরবরাহ প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।
ফলে বিপাকে কাঁটাতারের ওপারের মানুষ । বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির জেরে চিকিৎসা বা অন্য প্রয়োজনে ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষজনের মধ্যেও উদ্বেগ বেড়েছে। দেশে ফেরার জন্য তাঁরা মঙ্গলবার সহকারি হাইকমিশন অফিসে ভিড় করেছেন। আবার বাংলাদেশ যাঁরা গিয়েছিলেন,ভারতীয় নাগরিকরাও দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশে এখন যা পরিস্থিতি তাতে শুধুই অশান্তির আগুন জ্বলছে। তদারকি সরকার সেই অশান্তি কমাতে পারছে না। অথচ এই তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের নোবেল পুরষ্কার রয়েছে শান্তির দূত হিসাবে। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এবার বন্ধ হয়ে গেল ভিসা প্রদান৷ এদিকে সীমান্তে বন্ধের মুখে আমদানি রফতানি। তাতে বেশি ক্ষতি বাংলাদেশেরই। মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে কোন পন্যসামগ্রী আসে নি৷ এখন দু’তিন মাস আগে যাদের ভিসা করা হয়েছে সেইসব পর্যটকরা যাতায়াত করতে পারবেন ।
মঙ্গলবার আগরতলা-আখাউড়া স্থলবন্দরেও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে একটি সংগঠন। পুলিশের তরফে ওই কর্মসূচিতে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে স্থলবন্দরের কাছে। কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যের সর্বত্র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে গত কয়েক দিন ধরেই দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন ভারতীয়েরা। সমাজমাধ্যমে দু’দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ চরমে। দিল্লি থেকে ঢাকাকে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে সে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। যদিও বাংলাদেশের দাবি, সে দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন।
এই আবহে বাংলাদেশে এখন সীমান্ত বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সীমান্ত হাট। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। আগে প্রত্যেকদিন ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক যেত। এখন সংখ্যা একশোরও কম। তাই প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। আগে বাংলাদেশের ১০০ টাকা প্রতি বাটা ছিল ৭২–৭৫ টাকা। এখন সেটা নেমেছে ৬৯ টাকায়। সুতরাং আগামীদিনে আরও বড় সমস্যার মুখে পড়তে পারেপদ্মাপারের দেশ। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নানা অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে। হিন্দু নির্যাতন বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করল আরএসএস। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জনমত গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি তুলেছে তারা। সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এখন বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ত্রিপুরা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডে আক্রান্ত হয়েছে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস গাড়ি। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গাড়িতে থাকা ভারতীয় যাত্রীরা। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। জানান, বাসটি বিশ্বরোডের এক পাস ধরেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ বাসটিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দুর্ঘটনার কবলে ফেলার জন্য ধাক্কা দেয় পণ্যবাহী একটি ট্রাক। একই সময়ে রাস্তায় থাকা একটি অটো বাসের সামনে চলে আসে এবং শ্যামলী বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে। তাদের সামনেই ভারত বিরোধী নানা স্লোগান দেয় এবং কটু মন্তব্য করে যাত্রীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীরা। পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন এবং বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সেদেশের প্রশাসনকে দ্রুত হস্তক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রচারের আলোকে ফাঁকি দিয়ে দুইদিন ত্রিপুরা সফর করে গেলেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। ত্রিপুরায় কেন এলেন, কখন এলেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ্যে আসার আগেই তিনি আগরতলা বিমানবন্দর দিয়ে রাজ্য ত্যাগ করেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি আগরতলা বিমানবন্দরে আয়োজিত এক বৃক্ষরোপণ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এই বিশেষ উদ্যোগে তিনি একটি চারাগাছ রোপণ করেন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় এমন প্রকল্পের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি সকলকে ত্রিপুরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে উৎসাহিত করেন।
এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সংস্থা তাদের ৮০তম বর্ষপূর্তিতে সারা দেশে ৮০,০০০ চারাগাছ রোপণের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র আগরতলা বিমানবন্দরে ১,৫০০ চারাগাছ রোপণ করা হবে। সবুজায়নের পাশাপাশি, এএআই পরিবেশবান্ধব বিমানবন্দর তৈরিতে শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য নিয়েছে।
এরিক গারসেটি আগরতলার উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বৃক্ষরোপণকে সুস্থ ভবিষ্যৎ এবং মজবুত বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করেন। ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং নারী উদ্যোগিদের কাজ দেখে তিনি অভিভূত হন।
রাষ্ট্রদূত গারসেটি আমেরিকানদের ত্রিপুরার অনন্য সৌন্দর্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস আবিষ্কার করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “ভারত শুধু বড় শহরগুলির জন্যই নয়, আগরতলার মতো বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলির জন্যও বিশেষ।”
দুই দিনের সফর চলাকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আগরতলার একটি বেসরকারি হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। এরপর প্রগতি রোড সংলগ্ন এলাকায় জনজাতি যুবদের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। যদিও গোটা বিষয়টি প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে ছিল। বাংলাদেশে যখন অস্থির পরিস্থিতি চলছে সে জায়গায় অনেকটা গোপনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই ত্রিপুরা সফর নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের সঙ্গে অনেকেই মার্কিন সংযোগ রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই ঝটিকা সফরের অন্য কোন তাৎপর্য আছে কিনা সেটা বলবে সময়ই।
নয়াদিল্লি, ২৪ নভেম্বর ২০২৪: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড এবং উত্তরপ্রদেশে রাজনৈতিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্যেই ক্ষমতাসীন দলগুলি নতুন করে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করেছে, তবে বিরোধী দলগুলোও নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে।
মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজয়ী দল:
মহারাষ্ট্রের ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী) এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জোট বিপুল বিজয় লাভ করেছে। এই জোটের সাফল্যের ফলে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেবেন। ২৮৮ আসনের মধ্যে ১৫০টির বেশি আসন নিয়ে শিন্ডে-ব্যস্ত জোট রাজ্য সরকার গঠন করবে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে দল হারার পর তার দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে, যা দলের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ঝাড়খন্ডে নতুন রাজনৈতিক সূচনা:
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য:
নির্বাচনের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া:
এই নির্বাচনের ফলাফল রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে নতুন করে আকার দেবে। মহারাষ্ট্রে শিন্ডে-ফড়নবীস জোট এবং ঝাড়খন্ডে সোরেনের নেতৃত্বের মধ্যে সমর্থকদের মধ্যে আশা রয়েছে যে, নতুন সরকার রাজ্যের উন্নয়নশীল কাজগুলো ত্বরান্বিত করবে। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির পুনরায় নির্বাচিত হওয়া মানে আরও ৫ বছরের জন্য যোগী আদিত্যনাথের শাসন।
বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে এই ফলাফল নিয়ে অভিযোগও উঠেছে। তারা ভোটগ্রহণে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে এবং নির্বাচনের ফল পুনঃগণনার দাবি করেছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু হয়েছে।
নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ:
এই নির্বাচনের পরবর্তী প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, নির্বাচনী প্রচারের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়ন করা। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড এবং উত্তরপ্রদেশে উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষত, কৃষক সমস্যা, বেকারত্ব কমানো এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে হবে।
শেষ কথা:
অদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এবং এর সাথে যুক্ত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ উঠেছে, এবার তা আন্তর্জাতিক স্তরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অদানি গ্রুপের কিছু আর্থিক কার্যক্রম এবং বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যা কোম্পানির সুনাম ও কার্যকলাপের উপর প্রভাব ফেলেছে।
মূল অভিযোগসমূহ
- হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের এক রিপোর্টে অদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে কারসাজি, আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তোলে।
- সন্দেহজনক বিনিয়োগ কার্যক্রম: মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি জানিয়েছে, অদানি গ্রুপের কিছু বিনিয়োগ কার্যক্রম “কাজের স্বচ্ছতার অভাব” রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
- বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট: এই অভিযোগগুলির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বিনিয়োগকারী এবং ফান্ড ম্যানেজাররা অদানি গ্রুপ থেকে দূরে সরে যাওয়ার চিন্তা করছে।
মার্কিন তদন্তের সম্ভাবনা
মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই অভিযোগগুলি নিয়ে তদন্তের জন্য প্রস্তুত। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ভারতীয় বাজার নিয়ন্ত্রক SEBI ইতিমধ্যেই অদানি গ্রুপের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।
অদানি গ্রুপের প্রতিক্রিয়া
অদানি গ্রুপ এই অভিযোগগুলিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, এইসব অভিযোগ ব্যবসায়িক ইর্ষা এবং ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে দমিয়ে রাখার একটি কৌশল।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার প্রভাব ভারতের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু বিনিয়োগকারী সংস্থাও অদানি গ্রুপের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে ভারতের বড় সংস্থাগুলির ভূমিকা ও সুনামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪-এর এক্সিট পোলের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে স্পষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত মিলেছে। এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে শিবসেনা (একনাথ শিণ্ডে গোষ্ঠী), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), কংগ্রেস, এনসিপি (শরদ পওয়ার এবং অজিত পওয়ার গোষ্ঠী) এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মধ্যে। এক্সিট পোল অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিণ্ডে জোট এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস-এনসিপি জোট তাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পিছিয়ে থাকতে পারে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই নির্বাচনের মূল ইস্যু ছিল:-
১. মরাঠা সংরক্ষণ: মরাঠা সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ দাবিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল তাদের অবস্থান শক্ত করেছে।
২. কৃষি সংকট: কৃষক ঋণ মকুব এবং কৃষি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বড় ইস্যু ছিল।
৩. অবকাঠামো উন্নয়ন: মহারাষ্ট্রে মেট্রো প্রকল্প ও সড়ক উন্নয়ন প্রচারণার প্রধান অংশ হয়ে উঠেছে।
৪. বেকারত্ব: তরুণ ভোটারদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪-এর এক্সিট পোল অনুযায়ী:-
বিজেপি-শিণ্ডে জোট: এক্সিট পোল অনুযায়ী, বিজেপি এবং একনাথ শিণ্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা জোট ১৪০-১৬০টি আসনে এগিয়ে থাকতে পারে। তারা মূলত উন্নয়ন ও অবকাঠামো ইস্যুতে ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে।
কংগ্রেস-এনসিপি জোট: কংগ্রেস এবং শরদ পওয়ার গোষ্ঠীর এনসিপি ১০০-১২০টি আসন পেতে পারে বলে পূর্বাভাস। তারা মরাঠা সংরক্ষণ এবং কৃষক সমস্যা নিয়ে প্রচার চালিয়েছে।
উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা: উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ২০-৩০টি আসনে প্রভাব ফেলতে পারে। মরাঠা সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্যগত সমর্থন তাদের মূল ভরসা।
অন্যান্য দল এবং নির্দল প্রার্থী: ছোট দল এবং নির্দল প্রার্থীরা ১০-২০টি আসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ভোটদানের হার এবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বিভিন্ন দলের জন্য সমীকরণ জটিল করে তুলতে পারে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় ভোটদানের হার বেশি ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি-শিণ্ডে জোট ক্ষমতায় ফিরতে পারে, তবে কংগ্রেস-এনসিপি জোটও উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার ভূমিকা একাধিক হাঙ্গামি এলাকায় “কিংমেকার” হতে পারে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হবে গণনার দিন ই । মহারাষ্ট্রের জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, এই নির্বাচনের ফলাফল রাজ্যের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম আধুনিক যুগে তথ্য ও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। প্রচলিত প্রিন্ট ও সম্প্রচার সংবাদমাধ্যমকে ছাড়িয়ে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচার আজকের দিনে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে, ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই নিবন্ধে আমরা ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের প্রভাব, এর বিকাশ, প্রধান প্ল্যাটফর্মসমূহ এবং এর চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের সংজ্ঞা ও প্রেক্ষাপট
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম বলতে সেই সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে বোঝানো হয়, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রচার করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে মূলত নিউজ ওয়েবসাইট, নিউজ অ্যাপ্লিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল, এবং ব্লগ অন্তর্ভুক্ত। ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে খবর দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব, কারণ এটি স্থান এবং সময়ের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে। এই মিডিয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো ডিভাইসে যে কোনো সময়ে খবর পাঠানোর ক্ষমতা, যা প্রিন্ট বা টেলিভিশনের সীমাবদ্ধতা দূর করেছে।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের বিকাশ
ভারতে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের প্রসার গত কয়েক দশকে অসাধারণভাবে বেড়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের শুরুতে যখন ইন্টারনেট ভারতে জনপ্রিয় হতে শুরু করে, তখনই অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইটের বিকাশ ঘটে। প্রথমদিকে কিছু প্রধান সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনলাইন সংস্করণ চালু করে। যেমন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এবং এনডিটিভি-র মতো প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলি প্রথমদিকে তাদের ওয়েবসাইট চালু করে, যা জনগণকে অনলাইনে খবর পড়ার সুযোগ দেয়।
তবে, ২০১০-এর পর থেকে স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসার এবং ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যয় কমে যাওয়ার ফলে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। আজকের দিনে প্রায় সব প্রধান সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেখানে তারা প্রতিদিন আপডেটেড খবর প্রকাশ করে।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের প্রধান প্ল্যাটফর্মসমূহ
ভারতের ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে আজকের দিনে বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠক এবং দর্শকদের প্রয়োজন মেটায়। এখানে কিছু প্রধান ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের তালিকা দেওয়া হলো:
নিউজ ওয়েবসাইট: আজকের দিনে প্রচলিত সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলের প্রায় সবকটির নিজস্ব নিউজ ওয়েবসাইট রয়েছে। যেমন, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আজ তক, এনডিটিভি ইত্যাদি সংবাদমাধ্যমগুলি তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত খবর আপডেট করে। এসব ওয়েবসাইটগুলি সংবাদপাঠকদের জন্য দ্রুততম এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করে।
নিউজ অ্যাপ্লিকেশন: মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক সংবাদমাধ্যম তাদের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এসব অ্যাপের মাধ্যমে পাঠকরা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে খবর পড়তে পারেন। ইনশর্টস, ডেইলি হান্ট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া অ্যাপ, আজ তক অ্যাপ ইত্যাদি হলো কিছু জনপ্রিয় নিউজ অ্যাপ্লিকেশন, যা আজকের দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষ ব্যবহার করেন।
সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল: ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিও ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল রয়েছে, যেখানে তারা সংক্ষিপ্ত আকারে সংবাদ প্রচার করে। বিশেষত টুইটার এবং ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে নিউজ আপডেট এবং লাইভ কভারেজ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নিউজ এগ্রিগেটরস: গুগল নিউজ, ফ্লিপবোর্ড, এবং জিও নিউজ-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে খবর সংগ্রহ করে এবং একটি প্ল্যাটফর্মে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করে। এটি পাঠকদের একাধিক উৎস থেকে খবর পাওয়ার সুবিধা দেয় এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে খবর জানতে সাহায্য করে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও ব্লগ: ডিজিটাল যুগে অনেক স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও ব্লগারও সংবাদ প্রচার করছে। এদের অনেকেই প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের বাইরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করছে। উদাহরণস্বরূপ, দ্য প্রিন্ট, স্ক্রোল, কোয়ার্টজ ইন্ডিয়া, এবং নিউজলন্ড্রি হলো কিছু জনপ্রিয় স্বাধীন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের সুবিধা
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের তুলনায় অনেকগুলি সুবিধা প্রদান করে, যা একে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে:
দ্রুততা: ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর দ্রুততা। প্রিন্ট মিডিয়া বা টেলিভিশনের তুলনায়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খবর প্রচার মুহূর্তের মধ্যে সম্ভব। সংবাদমাধ্যমগুলি লাইভ আপডেট, লাইভ স্ট্রিমিং ইত্যাদির মাধ্যমে যে কোনো ঘটনার সরাসরি সম্প্রচার করতে পারে।
অ্যাক্সেসিবিলিটি: ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম ইন্টারনেট-সংযুক্ত যেকোনো ডিভাইসে অ্যাক্সেসযোগ্য। একজন পাঠক তাঁর স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, বা ল্যাপটপ থেকে খুব সহজেই খবর পড়তে পারেন। এটি প্রিন্ট এবং সম্প্রচার মাধ্যমের স্থানিক ও সময়িক সীমাবদ্ধতাগুলি দূর করেছে।
ইন্টারেক্টিভিটি: ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর ইন্টারেক্টিভ স্বভাব। পাঠকরা লাইভ চ্যাট, মন্তব্য, বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া পাঠকরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে এবং খবরের উপর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন, যা প্রথাগত মিডিয়াতে সম্ভব ছিল না।
বহুমাত্রিক কনটেন্ট: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র টেক্সট নয়, বরং ভিডিও, অডিও, এবং ছবি সমন্বিত কনটেন্ট উপস্থাপন করা যায়। এটি পাঠকদের জন্য খবরকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে এবং একইসঙ্গে তাদের জন্য গভীরতর বোঝাপড়ার সুযোগ তৈরি করে।
চ্যালেঞ্জসমূহ
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ, যা এর ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে:
ভুয়া খবরের প্রসার: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের একটি বড় সমস্যা হলো ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে ভুয়া খবর খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা জনমনে বিভ্রান্তি এবং সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে।
সেন্সরশিপ এবং স্বাধীনতা: বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম সেন্সরশিপ এবং নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশেষত, সরকার বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে খবরের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। এটি সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
আর্থিক সংকট: ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের আয়ের মডেল অনেক ক্ষেত্রেই প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের তুলনায় দুর্বল। বিজ্ঞাপনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, পেইড সাবস্ক্রিপশনের অভাব, এবং গুগল বা ফেসবুকের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানির প্রভাবের কারণে অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আর্থিক সংকটে পড়ছে।
বৈষম্যমূলক কনটেন্ট: ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে কিছু সময়ে পক্ষপাতমূলক এবং চরমপন্থী কনটেন্ট প্রচারের অভিযোগও উঠে। বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভাজনমূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, যা সমাজে বিভক্তি বাড়াতে পারে।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের ভবিষ্যৎ
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় হলেও এটি কিছু পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং-এর সাহায্যে সংবাদ সংগ্রহ, প্রকাশ এবং প্রচার প্রক্রিয়ায় উন্নতি হবে, অন্যদিকে ব্যক্তিগতকৃত খবর উপস্থাপনের মাধ্যমে পাঠকরা তাদের পছন্দমতো খবর পেতে পারবেন।
তবে, পাঠকদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং সচেতনতার বৃদ্ধিও অপরিহার্য, যাতে তারা সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য গ্রহণ করতে পারে এবং ভুয়া খবর বা প্রোপাগান্ডার ফাঁদে না পড়ে।
উপসংহার
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম, সংবাদ পরিবেশনের গণতন্ত্রীকরণ করেছে, যেখানে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে খবর প্রচার করতে পারে। উপসংহারে বলা যায়, ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম আমাদের জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে এবং এর গুরুত্ব কেবল বৃদ্ধি পাবে। প্রযুক্তিগত উন্নতি, পাঠকদের পরিবর্তিত চাহিদা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর ভূমিকা আরও গভীরভাবে প্রভাবিত হবে। তবে, এর সাফল্য নির্ভর করবে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা, সঠিক তথ্য পরিবেশন এবং সমাজের সৎ ও নৈতিক সাংবাদিকতা রক্ষার প্রচেষ্টার ওপর।
ভারতের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং বহুমুখী। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির সঙ্গে এই মাধ্যমের বিকাশ নিবিড়ভাবে জড়িত। সংবাদমাধ্যম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল, এবং স্বাধীনতার পর এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে, রেডিও, টেলিভিশন এবং আজকের ডিজিটাল যুগের সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত বিস্তৃত একটি যাত্রার কথা বলা হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রারম্ভিক যুগ: প্রিন্ট মিডিয়ার উত্থান
ভারতে সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়। ১৭৮০ সালে প্রকাশিত ‘হিকি’স বেঙ্গল গেজেট’ ছিল ভারতের প্রথম সংবাদপত্র। এটি জেমস অগাস্টাস হিকির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো। ‘হিকি’স বেঙ্গল গেজেট’ ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক অবস্থান গ্রহণ করা প্রথম সংবাদপত্র, যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে। এই সংবাদপত্রটি ব্রিটিশদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সরব ছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এরপর একের পর এক বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮১৮ সালে কলকাতায় রাজারাম মোহন রায় ‘সংবাদ কৌমুদি’ নামে একটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এটি ছিল ভারতের প্রথম প্রধান বাংলা সংবাদপত্র, যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পক্ষে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও, ১৮২২ সালে ‘সমাচার দর্পণ’ নামে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত এই সংবাদপত্রগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, শিক্ষিত সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
উনিশ শতকে সংবাদপত্রের বিস্তার
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের সংবাদপত্র জগতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। এই সময়ে বহু নতুন সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বাধীনতার জন্য ভারতের সংগ্রামকে উৎসাহিত করে এবং জনগণের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটায়। ‘ইংলিশম্যান’, ‘মিরাত-উল-আখবার’ (প্রকাশক: রাজা রামমোহন রায়), এবং ‘দ্য হিন্দু’ (১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত) এসময়ের উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্র ছিল। বিশেষত, ‘দ্য হিন্দু’ দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র হয়ে ওঠে, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছিল।
এছাড়া ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকার ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট চালু করে। এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয় ভাষার সংবাদপত্রগুলিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ সংবাদপত্রগুলি ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। তবে, এই আইন প্রিন্ট মিডিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তীব্রতর করে এবং ভারতীয় সংবাদপত্র জগতে আরো বেশি স্বাধীনতা এবং স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থনকারী কণ্ঠস্বরের উদ্ভব ঘটে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সংবাদপত্রগুলি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম। সংবাদপত্রগুলি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে। বাল গঙ্গাধর তিলক তাঁর সম্পাদিত সংবাদপত্র ‘কেশরী’ (মারাঠি ভাষায়) এবং ‘মরাঠা’ (ইংরেজিতে) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতেন এবং স্বরাজের জন্য দাবি তুলতেন। ১৯০৮ সালে তিলককে ব্রিটিশ সরকার গ্রেপ্তার করে, যা সংবাদমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনার জন্ম দেয়।
মহাত্মা গান্ধী নিজেও সংবাদপত্রকে স্বাধীনতা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালে ‘ইন্ডিয়া’ নামে একটি ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র প্রকাশ শুরু করেন। এছাড়াও তিনি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ এবং ‘নবজীবন’ নামে দুটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন, যেগুলির মাধ্যমে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেন।
সংবাদপত্রগুলির ভূমিকা শুধু সংবাদ প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনগুলিকে সংঘটিত করতে সাহায্য করেছিল। তারা রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছিল এবং জনগণকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছিল। বিশেষত, শ্রমিক আন্দোলন, স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সংবাদমাধ্যমগুলি জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
স্বাধীনতার পর সংবাদমাধ্যমের বিকাশ
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত হয়। ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদমাধ্যম ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে সংবাদমাধ্যমগুলি জাতীয় উন্নয়ন, শিক্ষা, এবং সমাজসংস্কারে প্রধান ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার সংবাদপত্রের বিকাশ ঘটে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অন্যতম দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা ছিল ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা। এই সময়ে সংবাদমাধ্যমের উপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়, যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক সংবাদপত্রকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সম্পাদকদের গ্রেপ্তার করা হয়, এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন কণ্ঠকে রোধ করা হয়। তবে, জরুরি অবস্থার পর সংবাদমাধ্যমগুলির মধ্যে পুনরায় স্বাধীনতা ফিরে আসে এবং তারা সরকারের সমালোচনা করতে শুরু করে।
রেডিও ও টেলিভিশনের উত্থান
প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি রেডিও এবং টেলিভিশনের উত্থান ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করে। ১৯২৭ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও (AIR) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের প্রধান রেডিও সংস্থা হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর, রেডিওর মাধ্যমে খবর পৌঁছানোর ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটে। বিশেষত, গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে প্রিন্ট মিডিয়া পৌঁছানো কঠিন ছিল, সেখানে রেডিওর মাধ্যমে সহজেই খবর ও তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
১৯৫৯ সালে ভারতের প্রথম টেলিভিশন স্টেশন দূরদর্শন চালু হয়। প্রাথমিকভাবে এটি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলেও ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে খবর এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলির আগমন ঘটে। এই সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংবাদ চ্যানেল যেমন এনডিটিভি, আজ তক, এবং জি নিউজ প্রচার শুরু করে।
ডিজিটাল যুগের আগমন
একবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ইন্টারনেটের আগমনের ফলে। ডিজিটাল যুগের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমগুলি প্রিন্ট এবং টেলিভিশন থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সংবাদপত্রগুলি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে শুরু করে, যেখানে তারা অনলাইন সংবাদ প্রকাশ করে।
বিশেষত, সামাজিক মাধ্যমের উত্থান সংবাদমাধ্যমের প্রচারের পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফেসবুক, টুইটার, এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলি জনগণের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়ার নতুন পথ তৈরি করে। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এবং অন্যান্য প্রধান সংবাদপত্রগুলি তাদের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করে, যা পাঠকদের আরো সহজে এবং দ্রুত খবর পড়ার সুযোগ দেয়।
উপসংহার
ভারতের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাস তার রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে রেডিও, টেলিভিশন, এবং এখন ডিজিটাল মিডিয়া পর্যন্ত, এই মাধ্যম ভারতীয় জনগণের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ।
Leave a Reply