কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ত্রিপুরা সফর

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরায় তিন দিনের সফরে রয়েছেন।রবিবার ধলাই জেলার হাডুকলাউতে ব্রু সেটেলমেন্ট ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। ব্রু জনজাতিদের সাথে আলাপচারিতার সময়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তারা ক্যাম্পে স্থায়ী বাড়ি পাওয়ার পরে তাদের কেমন লাগছে। মতবিনিময়কালে তিনি তাদের কাছ থেকে জেনে নেন, বাসিন্দাদের নিজস্ব রেশন কার্ড, আধার কার্ড আছে কিনা। তিনি বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন যে যাদের আয়ুষ্মান ভারত কার্ড নেই তারা শীঘ্রই কার্ড পাবেন। তিনি আশ্বস্ত করেন চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের জন্য ৫ লাখ টাকা পাবেন তারা । পাশাপাশি তিনি বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে চান, যে তারা রেশন দোকান থেকে তাদের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত চাল পান কিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের ব্যবসা শুরু করারও আহ্বান জানান। তিনি তরুণদের জীবনে উন্নতির জন্য সুশিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান। এক তরুণী তাদের নিজস্ব বাসস্থান দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শরণার্থী শিবিরে যে সুযোগ-সুবিধা তারা পাননি, নতুন বসতিতে সে সবই পাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রু পুনর্বাসন কেন্দ্র, বাজার এবং একটি স্কুলও পরিদর্শন করেন।

কেন্দ্রীয়

কেন্দ্রীয় অন্যান্য মন্ত্রীদের সাথে; প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার উত্তর-পূর্ব ভারত!

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্ব ভারতকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। আজ আগরতলায় উত্তরপূর্ব  পরিষদের ৭২ তম পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেবার সময়  তিনি বলেন ,  উত্তর পূর্বাঞ্চলের  জন্য গত ১০ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার বিনিয়োগকারীদের উত্তর-পূর্বে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করছে। আগে শুধু উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে লোক দেখানো চিন্তা করা হত, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। সমগ্র  অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শ্রী শাহ আরও বলেন,  প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের লক্ষ্য হল  উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের বাকি অঞ্চলের সঙ্গে সমমানে নিয়ে আসা। সমগ্র অচলে সড়ক পরিবহণ ও অসামরিক বিমান পরিবহন ব্যবস্থাপনার উন্নতি হয়েছে। 
 
উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এই অঞ্চলে জঙ্গীবাদ এবং সহিংসতার তীব্রতা হ্রাসের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অসামান্য ভূমিকার উল্লেখ  করেছেন। এই অঞ্চলে জঙ্গীদের কার্যকলাপ ৭১শতাংশ এবং প্রাণহানি ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ধলাই সফর

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগামী বাইশে ডিসেম্বর ধলাই জেলার হাদুকলইয়ের ব্রুহা পাড়ার রিয়াং পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পরে মাসুরাই পাড়ায় জনসভা করার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই ধলাই জেলায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো নানা সমস্যায় ধুকছে। পানীয় জলের অভাব
নিত্য সঙ্গী। আজ থেকে দুমাস আগেও তারা পানীয় জলের জন্য আন্দোলন করেছিল। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। এমনকি প্যাকেজ অনুসারে তাদের ঠিকভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সফরকালে জনজাতিরা তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্রু নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাতে তুলে দেবেন স্মারকলিপি। এমনটাই বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হল। রিয়াং জনজাতিরা পৃথক এডিসি গঠনের দাবি জানাবেন। ইতিমধ্যেই পৃথক স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে তারা একটি কমিটি ও গঠন করেছে। ব্রু জনজাতিদের নতুন এই দলের নম ব্রু রাইকাচাও রাইকসম ইউনাইটেড। সংক্ষেপে ব্রু বি আর ইউ। অতি সম্প্রতি নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হওয়ার পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো এডিসি অর্থাৎ স্বশাসিত জেলা পরিষদ তিপ্রাসাদের। রাজ্যের এডিসি অর্থাৎ জেলা পরিষদ তাদের কোন কাজে লাগছে না।

ব্রু জনজাতিদের নতুন এই দলের নেতৃত্বরা এমনও জানিয়েছেন যে, বিগত কিছু দিন পূর্বে তিপ্রা মথার সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের চুক্তি হয়। কি বিষয় রয়েছে চুক্তিতে তা অন্ধকারে জনজাতিরা৷ তাদের যা বলা হচ্ছে বা যা বোঝানো তাই বুঝতে হচ্ছে। তিপ্রাসাদের মগজ ধোলাই করে কিছু নেতা তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে মাত্র। ফলে তিপ্রাসারা যে তিমিরে ছিল এখনো সেই তিমিরেই৷ আর অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর কোন উন্নয়ন নেই। ব্রু জনজাতি নেতারা লিখিত ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে কি আছে তা প্রকাশ্যে আনতে হবে। কেননা, তিপ্রা মথার সাথে চুক্তি নিয়ে রিয়াং সহ বাকি বেশ কিছু ছোটবড় জনজাতি গোষ্ঠী আতঙ্কিত। তাই এই চুক্তিতে কি কি বিষয় গুলো রয়েছে তা জানা দরকার বলে মনে করছেন ব্রু জনজাতি নেতারা। কেননা, ব্রু জনজাতি নেতাদের মতে, আসলে একাংশ তিপ্রা মথার নেতা রিয়াং জনজাতিদের অস্তিত্ব স্বীকার করেননা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ধলাই জেলা সফরে গেলে রিয়াং নেতারা তার সাথে দেখা করে পৃথক এডিসি গঠন সহ ত্রিপাক্ষিক চুক্তির বিষয় সামনে আনার দাবি জানাবে।

বর্তমান এডিসির নামাকরন নতুন করে করার জন্য তিপ্রা মথা টি টি সি করার প্রস্তাব রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কিন্তু বি আর ইউ নেতারা লিখিত ভাবেই কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীকে এক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন। দাবী করেছেন, টি টি সি নয় টি টি টি সি করা হোক অর্থাৎ ত্রিপুরা ট্রাইব্যাল টেরিটোরিয়‍্যাল কাউন্সিল। পাশাপাশি ভাষা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। ব্রু নেতারা দাবি করেছেন, ককবরক তাদের মাতৃভাষা নয়। তাদের মাতৃভাষা কাওব্রু। ককবরক দেববর্মা জনজাতি গোষ্ঠীর ভাষা। তাছাড়া জাতি হিসাবেও তারা তিপ্রাসা নয়। তারা ব্রু জাতি। কিন্তু একটা শক্তি তাদেরকে জোর করে তিপ্রাসা বানাতে চাইছে। একই ভাবে বলপূর্বক ককবরক ভাষাকেও চাপিয়ে দিতে চাইছে। তারা কাউব্রু ভাষার বিকাশ চেয়েছেন৷

উত্তর পূর্বাঞ্চল

উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের বৈঠকে আগত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাচ্ছে ত্রিপুরা।

উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের ৭২তম প্লেনারি অধিবেশনকে ঘিরে নবরূপে সেজে উঠেছে রাজধানীর প্রজ্ঞাভবন। এছাড়া আগরতলার এম বি বি বিমানবন্দর থেকে শুরু করে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, রাজ্য অতিথি শালা, সার্কিট হাউস এবং হোটেল পোলো টাউয়ারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি স্থানে চলছে জোর পর্যবেক্ষন। ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। প্রজ্ঞাভবনে শেষ তুলির টানে ব্যস্ত শিল্পীরা। আধিকারিকরা ক্ষতিয়ে দেখছেন সার্বিক প্রস্তুতি। দুদিনের অধিবেশনে ২০ ডিসেম্বর হোটেল পোলো টাওয়ারে হবে প্রাক কারিগরি অধিবেশন। মূল প্লেনারি অধিবেশন হবে ২১ ডিসেম্বর আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে। এই প্লেনারি অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের চেয়ারম্যান অমিত শাহ, ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া, ডোনার মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ডক্টর সুকান্ত মজুমদার এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীগণ সহ উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের ২ জন সদস্য উপস্থিত থাকবেন। দুদিনের এই অধিবেশনকে সার্বিক সফল করতে রাজ্য প্রশাসনও প্রস্তুত। অতিথিদের আগমন শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে আজ থেকেই ব্যস্ততম হয়ে উঠেছে মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর। এদিকে বৈঠক উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আজ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। তিনি জানান, এনইসি বৈঠক উপলক্ষে আজ থেকেই আগরতলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে। শহরে ছয় থেকে সাত হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবে বলে তিনি জানান। বিএসএফ-কে সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরপত্তা ব্যবস্থা করার জন্যে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ করা যেতে পারে, এনইসি-র প্লেনারি সেশনে পৌরহিত্য করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক!

উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ তথা এনইসি বৈঠক ঘিরে এখন প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে। এনইসি বৈঠকে পৌরহিত করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি ২০ ডিসেম্বর রাজ্যে আসছেন। তিনদিন অবস্থান করবেন তিনি। জানা গেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কেন্দ্রীয় উচ্চপদস্থ আধিকারীদের একটি দল রাজ্যে আসছেন৷ বিশ্বস্ত সুত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আসছেন গোয়েন্দা প্রধান। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিক সহ এই রাজ্যের গোয়েন্দা অফিসারদের সাথে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একান্তে বৈঠক হওয়ার কথা। এনইসি বৈঠকের ফাঁকে তিনি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সীমান্ত অনুপ্রবেশ নিয়ে বিএসএফের পদস্থ আধিকারিকদের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের সাথেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ অচলঅবস্থা কায়েম হওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন পর্যন্ত তিনবার ভিডিও কনফারেন্সে বিএসএফের পদস্থ আধিকারিক সহ রাজ্য পুলিশের পদস্থ আধিকারিক এবং গোয়েন্দা সংস্থার অধিকারীদের সাথে বৈঠক করেছেন। রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন তিনি। সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে তিনি অবহিত হয়েছেন। এবার রাজ্য সফরে এসে এনইসি বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর করবেন। উল্লেখ করা যেতে পারে রাজ্যে অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্র উদ্বিগ্ন। আজ থেকে মাস ছয়েক আগে কেন্দ্রীয় বিদেশ দপ্তরের যুগ্ম সচিব রাজ্যে এসে অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মানব পাচার বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার অভিযান চালায় এনআইএ। রাজ্য পুলিশকে ঘুমে রেখেই মানব পাচারকারীদের ধরে নিয়ে যায় এনআইএ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ্যের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা সহ নেশার দৌরাত্ম্য রুখতে রাজ্য সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে সেই বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে খবর। এনইসি বৈঠকের ফাঁকে তিনি ধলাই জেলার রিয়াং পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। ধলাই জেলার রিয়াং পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো নানা অব্যবস্থায় ধুকছে। পানীয় জলের অভাব। রাস্তাঘাটের কোন সংস্কার নেই। ঠিকভাবে রেশন পাচ্ছেন না পুনর্বাসনব কেন্দ্রে থাকা রিয়াং জনজাতিরা। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফর ঘিরে রিয়াং পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। রাস্তাঘাট জোড়া তালি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। ধলাইজলা প্রশাসনের আধিকারিকরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছেন না শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধলাইজেলার রিয়াং পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো সফর করবেন কিনা। যদিও হেলিপ্যাড থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর তিনি ধোলাই জেলা সফরে যাবেন বলে খবর। হাদুকলহ রিয়াং পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শন সহ সেখানে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। প্রশাসন ইতিমধ্যেই এর সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনে এখন চুড়ান্ত ব্যাস্ততা।

এলবার্ট এক্কা

অনাদরে অবহেলায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ এলবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটি। আগরতলার ডুকলির ইচাবাজার সংলগ্ন স্টেট ব্যাংকের সামনেই রয়েছে এই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটি। এখানেই শহীদ জওয়ান এলবার্ট এক্কার অন্তেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। সেনাবাহিনীর ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক ছিলেন অ্যালবার্ট এক্কা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এলবার্ট এক্কা সহ ১২ জনের স্মরণে শ্রীপল্লি এলাকায় তাদের কবরস্থানে গড়ে উঠে শহীদস্মৃতি ফলকটি৷ স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সরকারের দেওয়া জমিতে একটি সৌধ নির্মিত হয়েছিল। আগে এই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ভুবন দাসের উদ্যোগে এখানে ছোট অনুষ্ঠান হত। করোনাকালে ভুবন দাস প্রয়াত হওয়ার পর এখন ফুল মালা দেওয়ার কেউ নেই। ২০২০ সালে শহীদ জওয়ান এলবার্ট এক্কার পরিবার রাজ্যে এসে ওই এলাকার মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছিলেন এক্কার স্ত্রীও৷ দেখা করেছিলেন সেই সময়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের সাথে। এলাকাটি সংরক্ষণ করার দাবী জানিয়েছিলেন। অ্যালবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতিস্তম্ভকে আরো সুন্দর করা এবং এই এলাকাকে কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ভাবনাচিন্তা করার দাবি করেছিলেন। আজ পর্যন্ত উপেক্ষিতই রয়ে গেছে এলাকাটি। সোমবার বাংলাদেশ বিজয় দিবস উদযাপনে যখন এলবার্ট এক্কা পার্কে রাজ্যপাল থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর পদস্থ আধিকারিকরা তার স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করছেন। তখন অনাদরে অবহেলায় রয়েছে ডুকলির এলবার্ট এক্কার শহীদ স্তম্ভটি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওই এলাকায় কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। এমনকি সেনাবাহিনীর কোন পদস্থ আধিকারিকরা শহীদ স্তম্ভে গিয়ে মাল্যদান করার সময় পেলেন না। অ্যালবার্ট মরণোত্তর পরমবীর চক্র পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের স্মৃতিতে গড়া সৌধটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি উদ্যোগ কার্যত দেখা যায়নি। এলাকার যুবক ভুবনই যুদ্ধের পর থেকে সৌধটিকে আগলে রেখেছিলেন।

বিহারের (অধুনা ঝাড়খন্ড) গুমলাতে জন্মগ্রহণ করেন আদিবাসী তরুণ অ্যালবার্ট এক্কা। প্রায় একা হাতে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ত্রিপুরা সীমান্তের কাছে ‘গঙ্গাসাগরের যুদ্ধে’ পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত করেছিলেন। তবে যুদ্ধে ৩ ডিসেম্বর শহীদ হন তিনি। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ খেতাবের নাম ‘পরম বীর চক্র’। যুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য পরে এক্কাকে সেই বিরল সম্মানে (মরণোত্তর) স্বীকৃতি জানানো হয়েছে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে মাত্র ২১ জন সেনা এই সম্মান পেয়েছেন। ল্যান্সনায়েক অ্যালবার্ট এক্কা তাদেরই একজন।

একাত্তরের যুদ্ধে ভারত তার পূর্ব ও পশ্চিম– উভয় সীমান্তেই লড়েছিল আর তার মধ্যে পূর্ব রণাঙ্গনে মাত্র একজনই পরম বীর চক্র পেয়েছেন। তিনিই অ্যালবার্ট এক্কা। শহীদ জওয়ানদের স্মৃতিতে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আগরতলার ডুকলিতে হত স্মরণ সভা। বিশেষ কিছু আড়ম্বর করে নয়। এলাকার মানুষজন ঐ সৌধে ফুল মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ‘৭১র যুদ্ধে প্রান দেওয়া সেই বীরদের। ১৬ ডিসেম্বরের আগে তারাই পরিষ্কার করে রাখতো নিজেদের গড়া সৌধটি। কিন্তু এলাকার ভুবন দাসের মৃত্যুর পর উৎসাহ হারিয়ে গেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার বা ভারত সরকার কারোর পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সেই স্মৃতি সৌধটিকে সংরক্ষণ করে রাখার, বা প্রতি বছর সেখানে কোন অনুষ্ঠান করার।

এলাকার মানুষ দাবি করেছিলেন অন্তত এই স্মৃতি সৌধটি অধিগ্রহণ করুক সেনাবাহিনী। প্রথম দিকে সেনা বাহিনী তাতে রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই উদ্যোগ আর বেশী দূর এগোয়নি। অথচ সেবারের যুদ্ধে ত্রিপুরার অবদান অনেকেই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন। ১৩ লক্ষ মানুষের ত্রিপুরা সেদিন আশ্রয় দিয়েছিল ১৬ লক্ষ বাংলাদেশি উদ্বাস্তুকে। অথচ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরায় হয় না কোন বড় ধরণের অনুষ্ঠান। অবহেলায় আর আনাদরে থাকে এলবার্টের শহীদ ফলকটি৷ মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশতাব্দী পরে সেনাবাহিনী এই স্মৃতিসৌধটির চারপাশে সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছে। উপরে শেড নির্মান করা হবে। চলছে ইট, বালি, সিমেন্টের গাধুনির কাজ৷ এলবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতি ফলকটি যখন অনাদরে, অবহেলায় তখন এলবার্ট এক্কা পার্কে সোমবার সকালে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যপাল ইন্দ্র সেনা রেড্ডি নাল্লু।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগরতলা লিচুবাগানস্থিত অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু। সেনাবাহিনীর ৫৭ নং মাউন্টেন আর্টি ব্রিগেডের উদ্যোগে আয়োজিত সাইকেল রেলির ও উদ্বোধন করেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, ব্যাটেলিয়ানের মেজর জেনারেল সমীর চরণ কার্তীকেয়ন সহ সেনাবাহিনী জওয়ানরা। মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে রাজ্যপাল বলেন ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাংলাদেশ পাশে দাঁড়িয়ে ভারতীয় জওয়ানরা পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করেছে। ভারতীয় জওয়ানদের আত্ম বলিদানের এই ইতিহাস কে স্মরণ করে তিনি তাদের ও পরিবার বর্গের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেই সময়ে ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে জওয়ানরা গান স্যালুট দেন ।

জাকির হোসেন

উস্তাদ জাকির হোসেন, সংগীতের মূর্ছনায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন। তিনি শুধুমাত্র একজন মৃদঙ্গবাদকই নন, একজন উদ্যমী সঙ্গীতজ্ঞ, শিক্ষক, গবেষক, এবং বিশ্বের শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি প্রভাবশালী নাম। বিশ্বজুড়ে তাঁর অসংখ্য অনুরাগী, শ্রোতা ও সঙ্গীতপ্রেমী রয়েছেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম প্রধান শিল্পী হিসেবে জাকির হুসেন তাঁর অসামান্য প্রতিভা ও সৃজনশীলতায় মুগ্ধ করেছেন হাজার হাজার শ্রোতাকে।

ভারতের বিশাল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ মৃদঙ্গবাদকরা স্থান পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জাকির হুসেন এক বিশেষ স্থান অধিকার করেন। তাঁর বাজানো মৃদঙ্গা এক ধরনের যাদু, যা সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ভারতীয় সঙ্গীতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিকতার সাথে মিশিয়ে, তিনি এক নতুন ধরনের সঙ্গীতশৈলী তৈরি করেছেন, যা বিশ্বের মঞ্চে বিশেষভাবে প্রশংসিত। 

জাকির হোসেনের প্রথম জীবন এবং শৈশবকাল

১৯৫১ সালের ৯ই মার্চ, মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন জাকির হুসেন। তাঁর পরিবার ছিল সংগীতের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। বাবা উস্তাদ আলী আকবর খান ছিলেন একজন খ্যাতনামা সেতারবাদক এবং মা, মা জাওয়াদ সুলতান খান, ছিলেন একজন গায়িকা। এমন এক পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফলে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্ম নেয়।

জাকির হুসেনের শৈশবকাল অতিবাহিত হয় সংগীত এবং সংস্কৃতির মধ্যে। তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে মৃদঙ্গা বাজানো শুরু করেন। তাঁর প্রথম গুরু ছিলেন উস্তাদ উমীরান খান, যিনি তাঁকে মৃদঙ্গার মৌলিক কৌশল শেখান। এই সময়ে জাকির হুসেন সংগীতের মূল ধারাগুলি শিখে নিজের দক্ষতা আরও উন্নত করতে থাকেন। তবে, তাঁর সংগীত জীবনের মূল যাত্রা শুরু হয় যখন তিনি শ্রী গুরুজি উস্তাদ আলি আকবর খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের গভীরতা শিখতে শুরু করেন।

জাকির হোসেনেরশিক্ষা এবং প্রাথমিক সংগীত জীবনের সূচনা

জাকির হুসেনের সংগীতজীবনের প্রথম দিক ছিল অত্যন্ত সৃজনশীল এবং চ্যালেঞ্জিং। তিনি শুধু মৃদঙ্গা নয়, আরও অনেক ধরনের তালের উপরে গবেষণা করেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ছিল। সেই সময়ে তিনি অন্যান্য মৃদঙ্গবাদকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে শুরু করেন, এবং সংগীতের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। একের পর এক কনসার্টের মাধ্যমে তিনি খুব দ্রুত পরিচিত হতে শুরু করেন। তাঁর মৃদঙ্গার অনন্য ধরন, স্বতন্ত্র বাজানোর স্টাইল এবং তালে নিখুঁত কমপোজিশন তাঁকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক নক্ষত্র করে তোলে। তাঁর বাজানো মৃদঙ্গা ছিল এক ধরনের মন্ত্রমুগ্ধকারী শক্তি, যা শ্রোতাদের এক নতুন সঙ্গীত দুনিয়ায় নিয়ে যেত।

বিশ্ব মঞ্চে জাকির হুসেন: আন্তর্জাতিক পরিচিতি

জাকির হুসেনের মৃদঙ্গা শুধুমাত্র ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও প্রশংসিত হয়েছে। তিনি একাধিক পশ্চিমা শিল্পী, যেমন জন ম্যাকলফিন, জর্জ হ্যারিসন, পল সাইমন, রীতভব নাগার, এবং হেনরি কপার এর সঙ্গে বিভিন্ন জ্যাজ এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মিশ্রণে বহু কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে পশ্চিমা সংগীতের ঐতিহ্যকে মিশিয়ে এক নতুন সংগীতধারা সৃষ্টি করেন। বিশ্বজুড়ে তাঁর কনসার্টগুলি প্রশংসিত হয়। তাঁকে বিভিন্ন দেশে সংগীতের অন্যতম মুখ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে নতুন ধারার সঙ্গীত তৈরি করার জন্য তিনি ‘হোমল্যান্ড’ নামে একটি ব্যান্ডও গঠন করেন, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। এর মাধ্যমে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং বিশ্ব সংগীতের মধ্যে এক সেতুবন্ধন স্থাপন করেন। জাকির হুসেন একদিকে যেমন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর নিবিড় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, তেমনি অন্যদিকে তিনি নতুন সঙ্গীতধারার দিকে অগ্রসর হয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, সঙ্গীত কোন দেশের সীমা বা জাতি-ধর্মের বিষয় নয়; এটি একটি সার্বজনীন ভাষা, যা মানুষের মনোজগতকে একত্রিত করে। তিনি ভারতীয় মৃদঙ্গাকে শুধু শাস্ত্রীয় গানের পরিবেশে নয়, আন্তর্জাতিক সঙ্গীত মঞ্চেও তুলে ধরেছেন। তাঁর বাজানো মৃদঙ্গা বিশ্বজনীন সংগীতের অংশ হয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাঁর ‘গ্রেট কনসার্ট’ শিরোনামের অনুষ্ঠান, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সঙ্গে একত্রে পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানটি সারা বিশ্বে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাকির হুসেনের বাজানোর ধরন ছিল সম্পূর্ণ মৌলিক এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীতধারা রয়েছে। তিনি মৃদঙ্গা বাজানোর সময় প্রতিটি তালের সাথে নির্দিষ্ট এক ধরনের সুর মিলিয়ে একটি ভিন্নধর্মী অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশন তৈরি করতেন। তাঁর বাজানোতে ছিল নিখুঁত তালের সাথে সংগীতের সূক্ষ্মতা এবং অনুপুঙ্খতা। তিনি বিশেষভাবে তালের বিভিন্ন প্রকৃতির উপর কাজ করেছেন এবং প্রতিটি তালের বিশেষত্ব তুলে ধরেছেন। তাঁর বাজানোর শৈলী ছিল অত্যন্ত সৃজনশীল, যেখানে তিনি কখনও তালে পরিবর্তন, কখনও সুরের সঙ্গে খেলা, কখনওবা নিঃশব্দতা সৃষ্টি করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। তাঁর এই বিশাল প্রতিভার জন্য তিনি ভারত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। জাকির হুসেন তার সংগীত জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৯০ সালে তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, পদ্মশ্রী, এবং ২০০২ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর অসামান্য সঙ্গীতকর্মের জন্য তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করেছেন। এ ছাড়া তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। জাকির হুসেনের কাজ শুধু তার মৃদঙ্গার জন্যই নয়, তাঁর সংগীতের নতুন ধারার জন্যও সমাদৃত। তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য এক মহান আদর্শ স্থাপন করেছেন।

জাকির হুসেনের সঙ্গীত যাত্রা একটি অনুপ্রেরণা, যা মৃদঙ্গা বাজানোর শুধুমাত্র কৌশল নয়, বরং সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বকে একত্রিত করার একটি উদাহরণ। তাঁর মৃদঙ্গার সুরে, তালে এবং সৃজনশীলতার মাঝে বিশ্বের এক অমূল্য ধন রূপে শোভিত হয়েছে। তাঁর অবদান আজীবন শংসনীয় এবং তাঁকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম মহান শিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। সংগীতের প্রতি তাঁর অবিরাম প্রেম এবং অনন্য প্রতিভা ভবিষ্যত প্রজন্মের

অষ্টম পে কমিশন ও ভারতের অর্থনীতি

অষ্টম পে কমিশন ও ভারতের অর্থনীতি;

একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ, ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে ভারতের অর্থনীতি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেই নয়, বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের অর্থনীতিতে সরকারি নীতিমালা এবং কর্মসূচিগুলি বিশাল প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্গঠনের জন্য গঠিত পে কমিশন অন্যতম। সপ্তম পে কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসছে, এবং অষ্টম পে কমিশনের গঠন নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ভারতের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভারতের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতির উদাহরণ, যেখানে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতার পর থেকে অর্থনৈতিক কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কার ভারতের অর্থনীতিকে উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্বায়নের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এর ফলে ভারতীয় অর্থনীতি একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কোভিড-১৯ মহামারী, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার গত কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীল থেকেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি প্রায় ৬.৩% থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছিল, তবে তা পুনরুদ্ধার করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন-

1. উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা (PLI) স্কিম
2. ডিজিটালাইজেশনের প্রসার
3. MSME খাতে বিশেষ প্যাকেজ
4. অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি

বর্তমানে মূল্যস্ফীতি একটি বড় সমস্যা। ২০২৩ সালে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬% অতিক্রম করেছে। এটি সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের শ্রেণির উপর। একই সঙ্গে, বেকারত্বের হার নিয়ন্ত্রণ করাও সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো এবং ভাতাগুলি পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে, যা শুধুমাত্র তাদের আর্থিক স্থিতি উন্নত করবে না বরং অর্থনীতির ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ভারতে পে কমিশন গঠন করা হয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো, পেনশন এবং ভাতার বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য। প্রথম পে কমিশন ১৯৪৬ সালে গঠিত হয়েছিল এবং এরপর প্রায় প্রতি দশকে একটি নতুন পে কমিশন গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ সপ্তম পে কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হয়, যা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ২৩.৫৫% বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল।

সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ

1. ন্যূনতম বেতন ₹১৮,০০০ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
2. সর্বোচ্চ বেতন ₹২,২৫,০০০ থেকে ₹২,৫০,০০০ করা হয়েছিল।
3. বিভিন্ন ভাতা, যেমন HRA, TA ইত্যাদি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
4. পেনশনভোগীদের জন্য নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়।

সপ্তম পে কমিশনের ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বোঝা প্রায় ₹১ লাখ কোটি বেড়েছিল। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেলেও রাজ্য সরকারগুলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

এরই মধ্যে অষ্টম পে কমিশনের প্রয়োজনীয়তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, অষ্টম পে কমিশন গঠন নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং মূল্যস্ফীতির কারণে বর্তমান বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।

 অষ্টম পে কমিশনের প্রত্যাশা 

1. ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি: সপ্তম পে কমিশনে ন্যূনতম বেতন ₹১৮,০০০ নির্ধারিত হয়েছিল। অষ্টম পে কমিশনে এটি ₹২৬,০০০ থেকে ₹৩০,০০০ করার দাবি উঠেছে।
2. স্বয়ংক্রিয় বেতন সংশোধন পদ্ধতি: প্রতি পাঁচ বছরে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব রয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেতন বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
3. পেনশন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ: পেনশনভোগীদের জন্য আরও ভালো সুবিধা এবং ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি রয়েছে।
4. HRA এবং অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি: বর্তমান সময়ে বাড়িভাড়া এবং অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা HRA ও অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।

অষ্টম পে কমিশন কার্যকর করা কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য একটি বড় আর্থিক বোঝা তৈরি করবে। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, একটি নতুন পে কমিশন কার্যকর হলে সরকারের খরচ লক্ষাধিক কোটি টাকা বাড়ে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং আয়কর সঞ্চয়ের অভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এটি আরও কঠিন হতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি শুধু তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে না, বরং এটি সাধারণের ইনকাম ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পেলে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ে, যা উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

তবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল বেতন বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থাকে। যখন মানুষের হাতে বেশি অর্থ থাকে, তখন বাজারে চাহিদা বাড়ে এবং সেই সঙ্গে পণ্যের দামও বেড়ে যায়। পে কমিশনের সুপারিশ শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য নয়, রাজ্য সরকারগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। রাজ্যগুলোর আর্থিক স্থিতি যদি দুর্বল হয়, তবে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

অষ্টম পে কমিশনের গঠন এবং তার সুপারিশ বাস্তবায়ন ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটি একদিকে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে, অন্যদিকে এটি অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়াবে। তবে এটি কার্যকর করার সময় সরকারের উচিত আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রাজ্যগুলোর আর্থিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। ভারতের অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রয়েছে। অষ্টম পে কমিশন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি কর্মচারী কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

tripura

সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর হবে জনগননা। আর জনগননার ভিত্তিতে হবে বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভা ও লোকসভার ডিলিমিটেশন বা সীমানা পুনর্বিন্যাস। এক্ষেত্রে বাড়বে আসনসংখ্যা। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে জনগননার কাজ শুরু হবে। জনগননার পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর, ২০২৬ সালেই গঠন হবে ডিলিমিটেশন কমিশন। তাদের কাজ হবে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিরহার এবং মোট জনসংখ্যা সহ কয়েকটি মাপকাঠি অনুযায়ী লোকসভা ও বিধানসভা আসনের সীমানা পুনবিন্যাস। ওই বর্ধিত লোকসভা আসনের ভিত্তিতেই ২০২৯ সালে হবে সাধারণ নির্বাচন। আর মোদি সরকারের টার্গেট অনুসারে যদি এক দেশ এক নির্বাচন নীতি কার্যকর হয়ে যায় তাহলে ২০২৮ সালের বদলে ২০২৯ সালে লোকসভার সাথে একসাথে হবে বিধানসভা ভোট৷ যদিও বিরোধী সিপিএম সহ বিরোধী দলগুলো এক দেশ এক নির্বাচন নীতির বিরোধীতা করে মাঠঘাট গরম করতে নেমে পড়েছে। রাজ্যেও ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহন করেছে বিরোধী দলগুলো৷ তাদের বক্তব্য এক দেশ এক নির্বাচন নীতি কার্যকর হলে দেশের স্বার্বভৌমত্ব, অখন্ডতার উপর যেমন আঘাত আসবে তেমনি বিপন্ন হবে সংবিধান৷ ডিলিমিটেশনের ফলে রাজ্যে লোকসভা আসন বেড়ে হবে তিন আর বাড়বে বিধানসভার আসনও৷ বর্তমানে ৬০ আসন বিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভায় জনজাতি সংরক্ষিত আসন রয়েছে ২০টি আর তপশিলি জাতি সংরক্ষিত আসন রয়েছে ১০টি৷ বাকি ৩০টি আসন সাধরন৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ডিলিমিটেশনের ফলে রাজ্য বিধানসভায় কম করেও পাঁচ থেকে সাতটি আসন বাড়তে পারে৷ সদরের আসন সংখ্যাও বাড়বে৷ যেমন সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে। বেশি ভোটার রয়েছে এরকম বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ভেঙ্গে নতুন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। দুর্বল আসনের পাশের কেন্দ্রেই যদি মজবুত ভোটব্যাঙ্ক থাকে, তাহলে দু’টি জুড়ে গেলে ধাক্কা লাগবে না গেরুয়া শিবিরে। এই আসন বিন্যাসই ভোটের অঙ্ক হতে চলেছে মোদির?

অতীত রীতির পরিবর্তন অবশ্য আরও হবে। ২০২৫ সালে জনগননা হলে সেই মতোই কার্যকর হবে ভবিষ্যতের জনগননার বৃত্ত। অর্থাৎ, আগামী দিনে প্রতি ১০ বছর অন্তর এই ২০২৫ সালকে ভিত্তি করেই হবে জনগননা। সবটাই ভোট অঙ্ককে মাথায় রেখে যে করা হচ্ছে তা বুঝতে বাকি নেই কারোর। যতটুকু খবর সীমানা পুনর্বিন্যাসে রাজ্যে লোকসভার দুটি আসন বেড়ে হবে তিনটি, ডিলিমিটেশনের পর আগামী লোকসভা নির্বাচন হবে তিনটি আসনে৷ জানা গেছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর দিকে নজর মোদি-শাহের৷ বিজেপি প্রভাবিত উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিধানসভা কিংবা লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়লেও সঙ্কট কমবে। দক্ষিণে এমনিতেই বিজেপির ভিত মজবুত নয়। সেখানে আসন কমলে কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের লাভই বেশি। কিন্তু মোদির উদ্বেগ বাড়িয়েছে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফল। শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত বহু রাজ্যেই ধস নেমেছে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে। আসন পুনর্বিন্যাস হলে গেরুয়া শিবির অঙ্ক কষবেই। মোট কথা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকে মাথায় রেখে ২০২৯ সালের ভোটের লক্ষে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মোদি শিবির। সেই লক্ষকে মাথায় রেখেই নতুন পার্লামেন্ট হাউস তৈরি করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অভিমত, আসন সংখ্যা হতে চলেছে অন্তত ৭৮৮। জানা গেছে ডিলিমিটেশনের ফলে বিধানসভা আসন সংখ্যা বাড়লে এতে লাভবান হবে জনজাতিরাও৷ বাড়বে জনজাতি সংরক্ষিত আসন। তবে মোদি – শাহদের প্রাথমিক লক্ষ্যই বাংলা এবং উত্তরপ্রদেশ। এই দু’টি রাজ্যের আসন বাড়িয়ে তাদের দু’ভাগে ভেঙে দেওয়ার ফর্মুলা কাজে লাগানো হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য শুধু বর্ধিত লোকসভা আসনের ভিত্তিতে ভোটের অঙ্কে থেমে থাকতে চাইছেন না। তাঁর টার্গেট ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন। এখানেই অঙ্ক শুরু মোদির।

news default thumb

চেন্নাইয়ের অ্যাপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল। শুধু গাফিলতিই নয়, অ্যাপেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করল ভোক্তা আদালত। রাজ্যে চিকিৎসায় উন্নত পরিষেবা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই চেন্নাই এর এপোলোতে ছুটে যান চিকিৎসা পরিষেবা নিতে। চেন্নাইয়ের অ্যাপেলোর উপর অগাধ বিশ্বাস অধিকাংশ মানুষের। অথচ রাজ্যে ডাক্তার মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন সরকার স্বাস্থ্য হাব করার উদ্যোগ নিয়েছে। জিবি হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস নেই একাংশ চিকিৎসকদের উপর। ফলে এই রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার পরেও একাংশ মানুষ ছুটে যান চেন্নাইয়ের এপেলোতে অ্যাপেলোর চিকিৎসকদের পরামর্শকে বেদবাক্য বলে মেনে নেন তারা। আর এই এপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলো। আগরতলার শহরদক্ষিনাঞ্চলের বাধারঘাটের মাতৃপল্লির বাসিন্দা শ্রীমতী দুলুরানী সাহা। স্বামী মৃত যতীন্দ্র চন্দ্র সাহা।২০০৭ সালের ১১জানুয়ারি গলব্লাডার অপারেশন করার জন্য চেন্নাই এর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন দুলুরানি।বর্তমানে তার বয়স ৮০ পেরিয়ে গেছে। সে বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালের ১২ই জানুয়ারি সার্জন টি. পৃথ্বী রাজ, অ্যাপোলো হাসপাতালে ওই মহিলার গল ব্লাডার অপারেশন করেন। সে বছরের ২১ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার পর আগরতলায় ফিরে আসেন তিনি । চিকিৎসা খরচ বাবদ ৭৬,৯৩০ টাকা অ্যাপোলো হাসপাতালকে মিটিয়ে দিতে হয়। গত ২০০৭ সালের ৪ মে দুলু রানি সাহা পুনরায় প্রচন্ড পেট ব্যথায় কষ্ট পেতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারছেন না চেন্নাই থেকে অপারেশন করে আসার পর কেন ফের পেট ব্যাথা।

আগরতলায় বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক বি. চৌধুরীর কাছে ছুটে যান তিনি। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসিত হন। পরে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর শ্রীমতী সাহাকে কলকাতার আইএলএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শল্য চিকিৎসক ডাক্তার সমরেশ ব্যানার্জী পুনরায় আল্ট্রা সোনোগ্রাফি সহ বিভিন্ন রকম ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করার পর শ্রীমতী সাহার পেটে ফের অপারেশন করা হবে জানিয়ে দেন। অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তারবাবুদের চক্ষু চড়কগাছ। শ্রীমতী সাহার পেটের ভেতর থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালের লোগো এবং নম্বর সহ একটি তোয়ালে বের করা হয়। অ্যাপোলো হাসপাতালের পরিষেবার গাফিলতি এতেই প্রমানিত। শ্রীমতী সাহা দীর্ঘ ১ বৎসর ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। পরে অ্যাপোলো হাসপাতালের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর একটি উকিল নোটিশ দেওয়া হয়। অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে রোগীর পরিবার আগরতলার ভোক্তা সুরক্ষা আদালতে ২০০৯সালে মামলা দায়ের করেন। আবেদনকারিণী মোট ৭,৬২,২৪০ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দাখিল করেন। কিন্তু আগরতলা ভোক্তা সুরক্ষা আদালতের এক্তিয়ার বহির্ভূত হওয়ার কারনে মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন দুলু রানির পরিবার। অবশেষে চেন্নাই এর তিরুভাল্লুরের District Consumer Disputes Redressal Commission, এ মামলাটি পুনরায় ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারী দায়ের করা হয়। মামলাটির নম্বর আরবিটি/সিসিনম্বর 39/2010। সুদীর্ঘ ১৬ বৎসর লড়াই এর পর ভোক্তা সুরক্ষা সংরক্ষণ আদালত অ্যাপোলো হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করে। আবেদনকারিণী মানসিক অবসাদ, আর্থিক সংকট ও শারিরীক যন্ত্রণায় ভোগার জন্য ও চিকিৎসার গাফিলতির জন্য চলতি বছরের ২১ মে মোট ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়।

বলা হয়, রায়ের কপি পাওয়ার ৬ সপ্তাহের ভেতর আবেদনকারীকে প্রদান করতে হবে। অন্যথায় বিলম্বিত প্রদানের জন্য উক্ত ক্ষতিপূরণের টাকার ওপর অতিরিক্ত বাৎসরিক ৯শতাংশ হারে সুদ হিসাবে দিতে হবে। সম্প্রতি ঋতিপূরণের টাকা আবেদনকারিণীকে প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আবেদনকারিণীর বয়স ৮০ বছর। ভোক্তা সুরক্ষা সংরক্ষণ আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট প্রশান্ত কুমার পাল, শ্রীমতী কে.এলাস জি, চামকি রাজ (চেন্নাই), মিস্টার মিহির কান্তি রায়, এবং মিস্টার সুবীর বৈদ্য সহ অন্যান্য আইনজীবীরা।