পেহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসী হামলার পর ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে নিরাপত্তা আরো কঠোর!
দেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাঁও এলাকায় সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলার ছায়া এবার ছড়িয়ে পড়েছে দূর পূর্বের ত্রিপুরায়। পেহেলগাঁও ঘটনার পর থেকেই সাব্রুম মহকুমা, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। বিএসএফ ও ত্রিপুরা পুলিশের যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বৈষ্ণবপুর, জলেফা, দক্ষিণ কলোনি-সহ একাধিক সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরাঞ্চলে।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) এবং বিএসএফের যৌথ উদ্যোগে সীমান্তবর্তী বাজার এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, চৌমুহনী ও জনবহুল অঞ্চলে সন্দেহভাজন গাড়ি এবং ব্যক্তির উপর কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।সীমান্তবর্তী রাস্তাগুলির পাশাপাশি কাঁটাতারের ধার ধরে বিএসএফের স্পেশাল মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে। বাজার এলাকায় দোকানপাটে তল্লাশি চালানোর কাজ অব্যাহত আছে, বিশেষ করে এমন দোকানে যেখানে বহিরাগতদের আনাগোনা বেশি। স্থানীয় বাজারে মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, “সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা বিএসএফকে জানান। সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন।”
জনসচেতনতা বাড়াতে পুলিশের তরফে ছোট ছোট মিটিংও করা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। SDPO জানান, “আমরা চাই জনগণ আমাদের সহযোগিতা করুক। নিরাপত্তা ব্যবস্থা তখনই কার্যকর হয় যখন স্থানীয় জনগণ সজাগ থাকে এবং প্রশাসনকে সময়মতো তথ্য দেয়।” সাব্রুমের বাসিন্দা প্রবীণ নাগরিক সুভাষ দাস বলেন, “এই ধরনের অভিযান দেখে আমাদের মনে সাহস বাড়ছে। আগে অনেক সময় নিরাপত্তা কম থাকলেও, এখন রাতেও টহল চলছে।”
ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সাব্রুম মহকুমা — তিন দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। সাব্রুম শহর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবেশপথ। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চল অত্যন্ত সংবেদনশীল। অতীতে বহুবার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ ও কখনও কখনও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে বিএসএফ আধিকারিক বলেন, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা রুখতে আমরা সদা প্রস্তুত।”
সূত্রের খবর, সীমান্ত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে মোবাইল ভেহিকেল, টাওয়ার নজরদারি, নাইট ভিশন ডিভাইস, সার্চলাইট এবং সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। কিছু এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে সীমান্তের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশেষ অভিযানে ইতিমধ্যেই কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা সামনে আসেনি এই সীমান্তে।
ত্রিপুরা সরকারের উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, পেহেলগাঁও ঘটনার পরে গোটা রাজ্যে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে সাব্রুম, বক্সনগর, সোনামুড়া, মেলাঘর ও কৈলাশহর অঞ্চলে বাড়তি নজরদারি চলছে। ত্রিপুরা পুলিশ, বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সমন্বিতভাবে নজর রাখছে যাতে কোনো বহিরাগত শক্তি রাজ্যে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। SDPO স্পষ্ট ভাষায় জানান, “আমরা এক ইঞ্চি জমিও অবৈধ প্রবেশের জন্য ছেড়ে দেব না। আমাদের বাহিনী প্রস্তুত। সাধারণ নাগরিকের সহযোগিতায় এই চ্যালেঞ্জ আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করব।”
সাব্রুমের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি এখন বাড়তি সতর্কতা এবং নিরাপত্তার মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাতভর টহল, চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশি এবং স্থানীয়দের সচেতন করার মাধ্যমে প্রশাসন যে কোনও রকম অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি সতর্ক আছেন।![]()







